বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) বিশ্বব্যাপী ১ লাখ ২৬ হাজার ৬০৪ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

অতি রহস্যময় ভাইরাসটির গতিপ্রকৃতি নিরূপণে চূড়ান্ত হিমশিম খাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কেউ বলছেন এটি প্রতিনিয়ত রূপ বদলাচ্ছে, আবার কেউ বলছেন ঠাণ্ডায় এর প্রাদুর্ভাব ক্ষমতা বেশি, গরমে কম। 

তবে নতুন এই করোনাভাইরাস উচ্চ তাপমাত্রায়ও দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের একদল বিজ্ঞানী। 

প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় এই ভাইরাসকে রেখেছিলেন তারা; এতে দেখা যায়, ভাইরাসটি সেখানেও পুনরুৎপাদন করতে সক্ষম।

ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের অ্যাইক্স-মার্সেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেমি চ্যারেল ও তার সহকর্মীদের গবেষণায় নতুন এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত শনিবার বায়োআরএক্সআইভিডটওআরজি ওয়েবসাইটে নন-পিয়ার-রিভিউড গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনাভাইরাসকে পুরোপুরি মারতে তাপমাত্রা প্রায় ফুটন্ত অবস্থায় (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নিয়ে যেতে হয়েছিল।

প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর উষ্ণতার সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, ১৯১৩ সালের ১০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৫৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

অর্থাৎ করোনাভাইরাসের টিকে থাকা বা ধ্বংস হওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সাধারণ তাপমাত্রা কোনো প্রভাব ফেলছে না।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমতাবস্থায় ল্যাবে করোনাভাইরাস নিয়ে যারা সরাসরি গবেষণা বা আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করছেন, তাদের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট ধরে ফুটানো হলে করোনাভাইরাস পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

তাই ল্যাব কর্মী, চিকিৎসক ও করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ভাইরাল কার্যক্রম পরীক্ষার জন্য আফ্রিকান সবুজ বানরের কিডনি সেলে ভাইরাসটি সংক্রমিত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। জার্মানির বার্লিনের একজন রোগীর শরীর থেকে ভাইরাসটির নমুনা নেয়া হয়েছিল।

ভিন্ন দুটি- নোংরা ও পরিষ্কার পরিবেশে পৃথক টিউবে প্রাণীর প্রোটিনসহ ভাইরাসটি রাখা হয়েছিল। পরিষ্কার পরিবেশে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাসটিকে তাপ দেয়ার পর দেখা যায় ভাইরাস কম কার্যকর হয়েছে। কিন্তু নোংরা পরিবেশে রাখা ভাইরাসটি একই তাপমাত্রায় তখনো বেঁচে ছিল ও পুনরুৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।

গবেষকরা বলেছেন, এই তাপমাত্রায় ভাইরাসটি কম সংক্রামক হলেও বেঁচে থাকা অবশিষ্ট অংশ আবারো সংক্রমণ ঘটানোর জন্য কার্যকর থাকে।